মাছ প্রাণীজ আমিষের মধ্যে অন্যতম। মাছ চাষের ক্ষেত্রে মাছের রোগ একটি বড় সমস্যা। আমাদের দেশের অধিকাংশ লোক মাছ খেতে পছন্দ করে। অনেক সময় মাছ নানা রোগে আক্রান্ত হয়। নানা কারণে উন্মুক্ত জলাশয়ের চেয়ে বদ্ধ জলাশয়ে চাষ করা মাছে রোগের প্রকোপ বেশি দেখা দেয়। তাই পুকুর-দীঘির মাছ প্রায়ই নানা রোগের কবলে পড়তে দেখা যায়।
ক্ষত রোগ
আমাদের দেশে সাধারণত শোল, গজার, টাকি, পুঁটি, বাইন, কৈ, ম্রিগেল, কার্পিও এবং পুকুরের তলায় বসবাসকারী অন্যান্য প্রজাতির মাছ ক্ষত রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
মাছের ক্ষত রোগ সম্পর্কে মৎস্য চাষিরা কম-বেশি সকলেই জানে আবার অনেকেই জানেনা। এরোগ সম্পর্কে ভালভাবে জানার উপায় আক্রান্ত মাছের গায়ে ক্ষত বা ঘাজনিত লাল দাগ দেখা যায়। এই দাগের আকৃতি ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে থাকে। ঘা মাছের লেজের গোড়া, পিঠ ও মুখের দিকেই বেশি হয়ে থাকে।
১. এরোগ দেখা মাত্র মাছ পুকুর থেকে দ্রুত তুলে ফেলতে হবে।
২. ১০ লিটার পানিতে ১০০ গ্রাম লবণ গুলে লবণমিশ্রিত পানিতে রোগাক্রান্ত মাছ পাঁচ থেকে দশ মিনিট ডুবিয়ে রেখে আবার পুকুরে ছেড়ে দিতে হবে।
৩. ক্ষত রোগ আক্রমণের আগেই প্রতি বছর আশ্বিন মাসের শেষে কিংবা কার্তিক মাসের প্রথম দিকে পুকুরে শতাংশ প্রতি ১ কেজি হারে পাথুরে চুন ও ১ কেজি হারে লবণ দিতে হবে। তাহলে সাধারণত আসন্ন শীত মৌসুমে ক্ষত রোগের কবল থেকে মাছ মুক্ত থাকবে।
মাছের পেট ফোলা রোগে সাধারণত রুই জাতীয় মাছ, শিং-মাগুর ও পাঙ্গাশ মাছ বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।
লক্ষণ
পেট ফোলা রোগাক্রান্ত মাছের দেহের রং ফ্যাকাশে হয়ে যায়। পেটে পানি জমার কারণে পেট ফুলে থাকে। মাছ ভারসাম্যহীনভাবে চলাফেরা করে। বেশিরভাগ সময়ই পানির ওপর ভেসে ওঠে এবং খাবি খায়। আক্রান্ত মাছ অতি দ্রুত মারা যেতে পারে।
প্রতিকার
প্রতিকার হিসেবে প্রতি শতাংশ জলাশয়ে ১ কেজি হারে পাথুরে চুন প্রয়োগ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে মাছের খাদ্যের সঙ্গে ফিশমিল ব্যবহার করা জরুরি। এছাড়া পুকুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনসহ মাছকে নিয়মিত সুষম খাদ্য প্রদান করতে হবে।
মাছের মধ্যে পাখনা ও লেজ পচা রোগে সাধারণত রুইজাতীয় মাছ, শিং-মাগুর ও পাঙ্গাস মাছ আক্রান্ত হয়ে থাকে।
লক্ষণ
এ রোগে আক্রান্ত হলে প্রাথমিকভাবে পিঠের পাখনা এবং ক্রমান্বয়ে অন্যান্য পাখনাও আক্রান্ত হয়। কোনো কোনো মৎস্যবিজ্ঞানীর অভিমত, অ্যারোমোনাডস ও মিক্সোব্যাকটার গ্রুপের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এ রোগের সংক্রমণ ঘটে। পানির ক্ষার স্বল্পতা ও পি-এইচ ঘাটতি দেখা দিলেও এ রোগের উৎপত্তি হতে পারে।
প্রতিকার
এরোগ আক্রান্ত মাছ পুকুর থেকে তুলে ০.৫ পিপিএম পটাশযুক্ত পানিতে আক্রান্ত মাছকে ৩ থেকে ৫ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে। পুকুরে সাময়িকভাবে সার দেওয়া বন্ধ করতে হবে।
এছাড়া রোগ-জীবাণু ধ্বংসের পর মজুদকৃত মাছের সংখ্যা কমিয়ে ফেলতে হবে। এ অবস্খায় প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে পাথুরে চুন প্রয়োগ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের দেশের প্রায় মাছেরই উকুন রোগ দেখা দেয়। এমধ্যে রুই মাছ, কখনো কখনো কাতল মাছও আক্রান্ত হয়ে থাকে। গ্রীষ্মকালে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এ রোগে মাছের সারা দেহে উকুন ছড়িয়ে দেহের রস শোষণ করে মাছকে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। এতে মাছ ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে মারা যেতে পারে।
প্রতিকার
মাছের উকুন রোগের প্রতিকার করার জন্য শতকরা আড়াই ভাগ লবণ দ্রবণে কিছু সময় আক্রান্ত মাছ ডুবিয়ে রাখতে হবে। এতে করে উকুনগুলো নিস্তেজ হয়ে পড়বে। এমতাবস্খায় হাত কিংবা চিমটা দিয়ে উকুনগুলো মাছের শরীর থেকে তুলে ফেলতে হবে।
অনেক সময় মাছের পুষ্টির অভাব জনিত রোগ দেখা দেয়। এ রোগে পুকুরে চাষযোগ্য যেকোনো মাছই আক্রান্ত হতে পারে। ভিটামিন এ.ডি এবং কে-এর অভাবে মাছ অন্ধত্ব এবং হাড় বাঁকা রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। মাছের খাবারে আমিষের ঘাটতি দেখা দিলেও মাছের স্বাভাবিক বর্ধনপ্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত হয়। অচিরেই মাছ নানা রোগের কবলে পড়ে। এসব রোগে আক্রান্ত মাছকে খাবারের সাথে প্রয়োজনীয় মাত্রায় সুনির্দিষ্ট ভিটামিন ও খনিজ লবণ মিশিয়ে খাওয়ানো হলে যথাশিগগিরই মাছের শারীরিক অবস্থার উন্নতি সম্ভব। মাছের রোগ প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মাছ চাষ করে চাষকৃত পুকুরে মাছের রোগ প্রতিরোধ করা অনেকাংশেই সম্ভব।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস